Wednesday, January 11, 2023

বাজারে ফিরছেন বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারী

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৪ কর্মদিবস পর মঙ্গলবার লেনদেন ৪০০ কোটির ঘর অতিক্রম করে। বুধবার সেটি আরও বেড়ে ৫০০ কোটির ঘর ছাড়াল ১৯ কর্মদিবস পর।

পরপর দুই দিনে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের হতাশা কাটার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগে ফিরছেন বড় অংকের ক্যাশহোল্ডাররা।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৪ কর্মদিবস পর মঙ্গলবার লেনদেন ৪০০ কোটির ঘর অতিক্রম করে। বুধবার সেটি আরও বেড়ে ৫০০ কোটির ঘর ছাড়াল ১৯ কর্মদিবস পর।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে পুঁজিবাজারে চলমান পতন ঠেকাতে গত জুলাইয়ের শেষে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এরপর মাস দুয়েক উত্থান হলেও তার প্রভাব পুরো পুঁজিবাজারে সমভাবে পড়েনি। ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানির শেয়ারের ওপর ভর করে বাড়ছিল সূচক। তবে সেই দুই মাসের বেশি উত্থান স্থায়ী হয়নি। অর্থনৈতিক সংকট ও সংবাদ মাধ্যমে আসা ব্যাংক খাতে অনিয়মের খবরে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা।

সেপ্টেম্বরে তিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি যাওয়া লেনদেন নভেম্বর-ডিসেম্বরে তলানিতে ঠেকে। ডিসেম্বর মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটির ঘরে লেনদেন হতে থাকে।

২১ ডিসেম্বর ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রত্যাহারের পরও অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। তবে নতুন বছরে মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বছরের প্রথম তিন দিন লেনদেন আরও তলানিতে নেমে দুই শ কোটির নিচে চলে যায়।

বছরের দ্বিতীয় দিন সোমবার লেনদেন নামে ১৫০ কোটি টাকার নিচে। এরপর পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে বুধবার বৈঠক করে বিএসইসি।

বৈঠকে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাজার ভালো করতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। আর যত দিন পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো না হবে ততদিন ফ্লোর প্রাইস পুরোপুরি উঠবে না।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যে পতন হয়েছিল, সে সময়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে এপ্রিল থেকে বাজার ভালো হওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু এসব বৈঠকের সুফল খুব বেশি দেখা যায়নি পুঁজিবাজারে।

বুধবার বৈঠকের পরের দুই দিন বাজারে প্রভাব না পড়লেও বিগত তিন দিনই বেড়েছে লেনদেন। বুধবার হাতবদল হয়েছে ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৯ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বেশি।

এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৯ কর্মদিবস আগে ১৩ ডিসেম্বর। ওইদিন হাতবদল হয় ৬১৬ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার।

মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৪৬২ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা, যা সোমবারের চেয়ে ১২৭ কোটি ৮২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বেশি।

সোমবার লেনদেন হয় ৩৩৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা রোববারের চেয়ে ৫০ কোটি ৪৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বেশি ছিল।

বুধবারও দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হলেও সূচক বেড়েছে। কারণ যেসব কোম্পানির দর কমেছে, সেগুলোর বাজার মূলধন কম হওয়ায় সূচকে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।

দিন শেষে ৪ পয়েন্ট বেড়ে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২০৯ পয়েন্টে।

দর বৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে ৩ গুণের বেশি। ৪০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। বিপরীতে দর কমেছে ১২৭টির। অপরিবর্তিত দরে লেনদেন করা কোম্পানির সংখ্যা ৭টি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৭টিতে, যার দুই-একটি বাদে প্রায় সবই ফ্লোর প্রাইসে রয়েছে।

এদিন লেনদেন না হওয়া কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। ৫৮টি কোম্পানির কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। আগের দিন এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৫৫টি।

লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৩৪টি কোম্পানির মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ৫৭টি কোম্পানিতে। আগের দিন এই অংকে লেনদেন হয় ৫১টিতে।

ওই ৫৭টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। বাকি ২৭৭টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে কেবল ১৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

লেনদেন প্রসঙ্গে ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, ‘আগে বলেছিলাম যে, ক্যাশ ফ্লো এলে যে কোনো জায়গা থেকে মার্কেট ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেরকম কিছু একটা হচ্ছে মনে হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তো ব্যবসা না হলে জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা ক্যাশহোল্ডার, বাজার মন্দা থাকার পরও তাদের লাইফ স্টাইলে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘মানি মেকিংটা তাদের জীবনের বেঁচে থাকার আনন্দ। ফলে সাইডলাইনে থাকি, দেখি ফ্লোর উঠে কি না, রিজনেবল প্রাইসে গিয়ে কিনব- এরকম চিন্তা থেকে তারা কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। তারা ধৈর্যহারা হয়ে মার্কেটে আসছেন- এরকম একটা প্রক্রিয়া ফিল করছি। এজন্যই টার্নওভার বাড়ছে বলে আমার মনে হয়।’



No comments: